এই পার্থিব জগতের প্রতিটি ক্ষেত্রে আর্থিক সঙ্গতি একটি অপরিহার্য বিষয়। এবং এটা ভবনের জন্য ভিত্তির মতো। ভিত্তি ছাড়া যেমন উঁচু দালান হয় না, তেমনি আর্থিক সঙ্গতি ছাড়া পৃথিবীতে কোন কাজই স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। মাদরাসা-মসজিদে কেবল আখেরাতের চর্চা হলেও- যেহেতু এর কার্যক্রম এই দুনিয়ায় বসে হচ্ছে, তাই আর্থিক সঙ্গতি থেকে মাদরাসা-মসজিদ মোটেই অমুখাপেক্ষী নয়। বরং পৃথিবীর অন্য সব কিছুর মত সমানভাবে মাদরাসা-মসজিদেরও আর্থিক সঙ্গতি লাগে। নতুবা মসজিদ বিরান হয়ে যেতে পারে। মাদরাসাগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর একটি জাতির জন্য অবহেলাবশত এমনটি ঘটা কতোটা লজ্জাজনক এবং পরকালের জন্য কতোটা বিপদজনক তা মুসলমান মাত্রই বুঝতে পারে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনী বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের থেকে সময়ে সময়ে চাঁদা সংগ্রহ করেছেন। মসজিদে নববীর সুফ্ফা নামক মাদরাসায় কতক সাহাবী পড়ে থাকতেন। তাঁরা পৃথিবীর সবকিছু ছেড়ে ইলমের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এবং অন্য সাহাবীরাও এই তালিবে ইলম সাহাবাদের ভরণ পোষন, আর্থিক সঙ্গতি ও আন্যন্য প্রয়োজন নিজেদের দায়িত্ব ও দায়মুক্তি মনে করে পুরা করতেন। التعاون على البر তথা পূণ্যের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা-ইসলামের একটি চমৎকার ধারা ও অত্যাধিক সাওয়াবের কাজ। এর বিভিন্ন পন্থা রয়েছে। তবে সর্বোত্তম পন্থাগুলোর একটি হলো- ভরণ-পোষন ও আর্থিক সঙ্গতির দায়িত্ব গ্রহন করে তালিবে ইলমদেরকে নিশ্চিন্তে ইলম হাসিলের সুযোগ করে দেয়া। অদ্রুপ মাদরাসা-মসজিদের নির্মাণে অর্থ ব্যয় করে নিজের পরকালমুক্তির ব্যবস্থা করে নেয়া। উপমহাদেশে কওমী মাদারিসের প্রাণকেন্দ্র দারুল উলূম দেওবন্দ সাধারণ কওম বা জনগণের আর্থিক অনুদান ও চাঁদার উপর ভিত্তি করেই চলে। আর এ নীতি অনুসরণের ফলেই উপমহাদেশের সকল দেওবন্দি ধারার মাদরাসাগুলোর নাম হয়ে গেছে কওমী মাদরাসা (মুসলিম জনগণ-কেন্দ্রিক মাদরাসা)। এই অনুদান ও চাঁদার নীতি অনুসরণে কোন সংকোচ বা হীনমন্যতার কিছু নেই। কারণ দ্বীনী ক্ষেত্রে এটাই নববী ও সুন্নতী ধারা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, তোমরা কিছুতেই পুণ্যের স্তরে উপনীত হতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে (আল্লাহর জন্য) ব্যয় করবে। তোমরা যা কিছুই ব্যয় করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবগত। [সূরা আলে ইমরান]
- হাদীস শরীফে এসেছে, তিনটি বিষয় এমন আছে যার সাওয়াব মৃত্যুর পরও জারী থাকে। তন্মধ্যে একটি হলো, ছাদাকায়ে জারিয়া। [সহীহ মুসলিম]। মাদরাসার দান ও অনুদানগুলো ঐ ছাদাকায়ে জারিয়ার প্রধান ক্ষেত্র।
- যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মরু-কবুতরের নীড়ের মত বা তার চেয়ে ক্ষুদ্র একটি মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি আবাস তৈরী করে দিবেন। [সুনানু ইবনে মাজাহ] একটিমাত্র খেজুর দান করে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। [সহীহ বুখারী]
- এসব কথা ও ফযীলতকে সামনে রেখে মসজিদ-মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় আমরা এগিয়ে আসতে পারি। এই এগিয়ে আসা আমাদের জন্য। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। আমাদের দুনিয়ার জন্য। এবং জান্নাতেও অনিন্দসুন্দর একটি বালাখানা পাওয়ার জন্য। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন।